Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
“স্বাধীনতাত্তোর প্রাথমিক শিক্ষায় বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রাথমিক শিক্ষা” শীর্ষক সেমিনার
বিস্তারিত

সদর উপজেলার আব্দুর রব বগা মিয়া মিলনায়তনে “স্বাধীনতাত্তোর প্রাথমিক শিক্ষায় বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রাথমিক শিক্ষা” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব তাহমিনা আক্তার রেইনা , উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জনাব শাওয়াল বিশ্বাস ,উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর জনাব আব্দুল মতিন । এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নার্গিস সুলতানা ,ফাতেমা খাতুন, বিলকিস আক্তার, মোঃ বেলাল হোসেন , নিশীথ কুমার বিশ্বাস । স্বাগত বক্তব্য রাখেন এইউও মোঃ জোনাব আলী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন এইউও সাঈদা শবনম । প্রাথমিক শিক্ষায় বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরনীয় অবদান সম্পর্কে শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ছাতিয়ানি সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক ইকরামুল কবীর মামুন, প্রশি মাহমুদুল হাসান , প্রশি জাকির হোসেন, প্রশি মোঃ মাসুদ রানা প্রমুখ। বক্তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাথমিক শিক্ষায় অবদানের বিস্তর আলোচনার পাশাপাশি তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য, তার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অতিথিদের বক্তব্যঃ জনাব তাহমিনা আক্তার রেইনা ,উপজেলা নির্বাহী অফিসার ,পাবনা সদর, পাবনা

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে প্রাথমিক শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। তখন শিক্ষার্থীদের মাঝে বই, খাতা, পেনসিলসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হতো। পাশাপাশি বিদেশি বিস্কুট, ছাতু, দুধসহ নানা খাদ্যসামগ্রীও শিক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করা হতো। শিক্ষকদের অবস্থা বিবেচনা করে অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিল থেকে সাধারণ শিক্ষকদের ন্যায্যমূল্যে কাপড় সরবরাহের ব্যবস্থা করেন তিনি। সে সময় সারাদেশে গড়ে তোলা হয় অসংখ্য প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা ব্যবস্থার দিকনির্দেশনা প্রদান করার জন্য বিখ্যাত শিক্ষাবিদ বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদাকে সভাপতি করে ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি শিক্ষা-কমিশন গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর একান্ত ইচ্ছায় ১৯৭৪ সালের মে মাসে একটি সুদূরপ্রসারি লক্ষ্য নিয়ে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা-কমিশন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এই কমিশনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল জাতির প্রত্যাশা আর বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষাভাবনা। কমিশনে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৮ বছর করার সুপারিশ করা হয়। উচ্চশিক্ষা গ্রহণেচ্ছুদের জন্য সাক্ষরতা অভিযান নামে বিশেষ একটি পদক্ষেপের কথা শিক্ষা-কমিশনে উল্লেখ করা হয়। ৫ বছরের মধ্যে ১১-৪৫ বছর বয়সী সাড়ে তিন কোটি নিরক্ষর মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দেয়ার প্রস্তাব ছিল এই শিক্ষা-কমিশনে। অর্থাৎ শুধু নিজে শিক্ষিত হলে চলবে না, বরং নিরক্ষরদের শিক্ষিত করার মাধ্যমে সামাজিকতা তৈরি ও দেশ গঠনে অবদান রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলতেন ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এ পর্যন্ত শুধু আমলাই সৃষ্টি করেছে, মানুষ সৃষ্টি করেনি।’ তিনি মানুষ সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেন। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যঃ জনাব শাওয়াল বিশ্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান, পাবনা সদর উপজেলা পরিষদঃ

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন ও বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা একই সুতোয় গাথা । তিনি দেশ স্বাধীন হবার পপরই সমগ্র শিক্ষা নিয়ে ভাবনা শুরু করেছিলেন। আর যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষা ভিত্তি। তাই এই শিক্ষা নিয়েই ভাবনা শুরু করেন তিনি। গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষের সন্তান দের কাছে শিক্ষাকে সহজভাবে পৌছে দিতেই প্রাথমিক শিক্ষাকে এক ঘোষণায় সরকারীকরণ করেন। ১৯৭২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেসনোটে বলা হয়, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলা ভাষাই হবে শিক্ষার মাধ্যম। ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ অন্য একটি প্রেসনোটের মাধ্যমে জানানো হয়, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পাবে এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পাবে বাজার মূল্যের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম দামে। বঙ্গবন্ধুর সরকারের উদ্যোগে ৩৬ হাজার ১৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয় এবং বাড়ানো হয় শিক্ষকদের বেতন। এছাড়া নারীর উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নারীদের অবৈতনিক শিক্ষা চালু করার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা এবং দর্শন এখন আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে চায়। গুণগত শিক্ষামান নিশ্চিত করা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের সুযোগ বৃদ্ধি ছাড়া কোনো দেশ উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তাই বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন বাস্তবায়ন করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আলোকিত মানুষ তৈরি ও কল্যাণমুখী সমাজ দিকে ধাবিত হওয়া আবশ্যক।

সভাপতির বক্তব্যঃ জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, পাবনা সদর 

১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ৬টি প্রধান শিক্ষা কমিশনসহ মোট ৮টি শিক্ষা প্রতিবেদন পেশ করে। কিন্তু কোনোটিতেই অখণ্ড পাকিস্তানের জাতীয় মুক্তি ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি। তাই তিনি সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও শিক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবেন। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা ও দর্শনকে ধারণ করে যেকোনো জাতি একটি আধুনিক, কর্মমুখী এবং বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। এ কারণেই তার শিক্ষা ভাবনা ‘জাতীয়’ থেকে ‘বৈশ্বিক’। বাংলাদেশ উত্তরোত্তর যে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৩ সালের ২০ মার্চ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় শিক্ষা সম্পর্কে তার চিন্তাধারা আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু। সেদিনের অনুষ্ঠানে নতুন স্নাতক সনদধারী এবং শিক্ষকদের সামনে বঙ্গবন্ধু বলেন,- ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দুইশ' বছরের ও পাকিস্তানের ২৫ বছরে গড়ে ওঠা শিক্ষাব্যবস্থা শুধু কেরানি তৈরি করেছে, মানুষ তৈরি করেনি। এজন্য তিনি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন, যার মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলা যাবে এবং যার মাধ্যমে স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে সহায়তা করবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বঙ্গবন্ধু।আর দক্ষ মানবসম্পদ বা সোনার বাংলা গড়তে আমাদের শিক্ষায় গুরত্ব দিতে হবে আর এ শিক্ষার ভিতই হল প্রাথমিক শিক্ষা ।তিনি শিক্ষকদের নানামুখী দিক নির্দেশনা দিয়ে বলেন বিদ্যালয়ে স্থাপিত মুক্তিযোদ্ধা কর্নারের তথ্য ,ছবি ও বই  সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সম্যক ধারনা দিতে অনুরোধ জানান।  তিনি উপস্থিত সদর উপজেলার শিক্ষকদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে বলেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনের তাগিদ দেন ও নতুন প্রজন্ম যেন বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানান। 

পরিশেষে সভাপতি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।